নিচে কয়েকটি পরিস্থিতির উল্লেখ আছে। এসব পরিস্থিতিতে তোমার বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের লোকজন, কিংবা এলাকার মানুষ যেভাবে কথা বলে, তা কথোপকথনের মাধ্যমে উপস্থাপন করো।
১. খেলার সময়ে কোনো একটা বিষয় নিয়ে তর্ক হচ্ছে।
২. পড়াশোনা কেমন চলছে তা নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে কথা হচ্ছে।
৩. সবজি কিনতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দরাদরি হচ্ছে।
উপরের পরিস্থিতিগুলোতে যে ভাষায় কথা বলেছ, নিচের ক্ষেত্রে তা আলাদা কি না, তা নিয়ে আলোচনা করো।
৪. রেডিও-টেলিভিশনে পঠিত সংবাদ ও প্রতিবেদনের ভাষা
৫. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনের ভাষা
৬. পাঠ্যবইয়ের ভাষা
প্রথমে দেওয়া পরিস্থিতি তিনটিতে তোমরা এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছ, কিংবা কোনো কোনো শব্দের উচ্চারণ এমনভাবে করেছ, যা পরের ক্ষেত্র তিনটির সাথে মেলে না। নিচের ছক অনুযায়ী এমন কিছু শব্দের তালিকা করো। ধরা যাক, 'টাকা' শব্দটি তোমরা 'টাহা' বলেছ। সেক্ষেত্রে নিচের ছকের বাম কলামে 'টাহা' এবং ডান কলামে 'টাকা' লিখতে হবে।
বাম কলাম | ডান কলাম |
---|---|
টাহা | টাকা |
আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষা
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ভাষায় ভিন্নতা আছে। যেমন- যশোর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের মানুষ একভাবে কথা বলে না। 'ছেলে' শব্দটিকে কোনো অঞ্চলের মানুষ বলতে পারে 'পুত', কোনো অঞ্চলে 'ব্যাটা', কোনো অঞ্চলে 'পোলা'। এভাবে অঞ্চলভেদে অনেক শব্দই বদলে যায়। কখনো কখনো শব্দের উচ্চারণে পার্থক্য ঘটে। যেমন, 'ছেলে' শব্দটি উচ্চারিত হতে পারে 'ছেলে' বা 'শোলে'। ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভাষার এই রূপভেদকে বলা হয় আঞ্চলিক ভাষা।
আঞ্চলিক রূপের জন্য এক অঞ্চলের মানুষের কথা আর এক অঞ্চলের মানুষের বুঝতে সমস্যা হয়। এ কারণে, সব অঞ্চলের মানুষের সহজে বোঝার জন্য ভাষার একটি রূপ নির্দিষ্ট হয়েছে, তাকে প্রমিত ভাষা বলে।
ধ্বনির উচ্চারণ
নিচের জোড়া শব্দগুলো উচ্চারণ করো। প্রতি জোড়া শব্দের প্রথম ধ্বনিতে পার্থক্য আছে। এটা উচ্চারণের সময়ে খেয়াল করবে। জোড়ার প্রথম শব্দের প্রথম ধ্বনিটি উচ্চারণ করতে মুখ থেকে অল্প বাতাস বের হয় এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথম ধ্বনিটি উচ্চারণ করতে বেশি বাতাস বের হয়। যেমন: কই' শব্দের ক এবং 'গ্রহ' শব্দের যা শব্দগুলো উচ্চারণের সময়ে মুখের সামনে এক টুকরা কাগজ ধরে পরীক্ষা করে দেখতে পারো।
কই- খই চাল - ছাল টুক - ঠুক তালা - থালা পুল - ফুল | কোল - খোল চাপ - ছাপ টোকা - ঠোকা তাক - থাক পিতা - ফিতা | গোড়া - ঘোড়া জাল - ঝাল ডাল - ঢাল বান - ভান দান - ধান | গড়ি - ঘড়ি জুড়ি - ঝুড়ি ডাক - ঢাক দুম - ধুম বোল - ভোল |
উচ্চারণ ঠিক রেখে ছড়া পড়ি
ছড়া পড়তে নিশ্চয় তোমাদের ভালো লাগে। এখানে একটি ছড়া দেওয়া হলো। ছড়াটির নাম 'চিঠি বিলি'। এটি লিখেছেন রোকনুজ্জামান খান। ছড়াটি নেওয়া হয়েছে তাঁর 'হাটু টিমা টিম' নামের বই থেকে। রোকনুজ্জামান। খান 'দাদাভাই' নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু-কিশোরদের জন্য 'কচিকাঁচার মেলা' নামে। একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
ছড়াটি প্রথমে নীরবে পড়ো; এরপর সরবে পাঠ করো।
রোকনুজ্জামান খান
ছাতা মাথায় ব্যাঙ চলেছে
চিঠি বিলি করতে,
টাপুস টুপুস ঝরছে দেয়া
ছুটছে খেয়া ধরতে।
খেয়ানায়ের মাঝি হলো
চিংড়ি মাছের বাচ্চা,
দু চোখ বুজে হাল ধরে সে
জবর মাঝি সাচ্চা।
তার চিঠিও এসেছে আজ
লিখছে বিলের খলসে,
সাঁঝের বেলার রোদে নাকি
চোখ গেছে তার বলসে।
নদীর ওপার গিয়ে ব্যাঙা
শুধায় সবায়: ভাইরে,
ভেটকি মাছের নাতনি নাকি
গেছে দেশের বাইরে?
তার যে চিঠি এসেছে আজ
লিখছে বিলের কাতলা:
এবার সারা দেশটি জুড়ে
নামবে দারুণ বাদলা।
তাই তো নিলাম ছাতা কিনে
আসুক এবার বর্ষা,
চিংড়ি মাঝির দেয়া না আর
ছাতাই আমার ভরসা।
কাতলাঃ মাছের নাম
খলসেঃ মাছের নাম
টাপুস টুপুসঃ বৃষ্টি পড়ার শব্দ
খেয়াঃ নদী পার হওয়ার নৌকা।
খেয়া নাঃ খেয়া নৌকা।
বাদলাঃ একনাগাড়ে বৃষ্টি।
ধেয়ানারের মাঝিঃ খেয়া নৌকার মাঝি।
ভরসাঃ নির্ভর করা, অবলম্বন
চিঠিঃ কোনো খবর জানিয়ে লেখা কাগজ।
ভেটকিঃ মাছের নাম।
চিঠি বিলি করাঃ চিঠি পৌঁছে দেওয়া।
সাঁঝের বেলাঃ সন্ধ্যার সময়।
ঝলসানোঃ উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাঁধানো।
সাঙ্গঃ সত্য
শব্দ খুঁজি
অনেক শব্দ তোমার অঞ্চলের মানুষ ভিন্নভাবে উচ্চারণ করে। আবার, অনেক প্রমিত শব্দের বদলে তোমার অঞ্চলের মানুষ আলাদা শব্দ ব্যবহার করে। এ রকম শব্দ খুঁজে বের করো এবং নিচের ছক অনুযায়ী তালিকা করো।
আঞ্চলিক উচ্চারণ/শব্দ | প্রমিত শব্দ |
---|---|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রমিত ভাষার চর্চা করি
এই পরিচ্ছেদ শুরুর পরিস্থিতি তিনটিতে যেভাবে কথোপকথন হয়েছে, সেই কথাগুলো এবার প্রমিত ভাষায় বলার চেষ্টা করো।
১. খেলার সময়ে কোনো একটা বিষয় নিয়ে তর্ক হচ্ছে।
২. পড়াশোনা কেমন চলছে তা নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে কথা হচ্ছে।
৩. সবজি কিনতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দরাদরি হচ্ছে।
আরও দেখুন...